ঘাগড়- একটি হারিয়ে যাওয়া নদী সরস্বতী

দেবশ্রী চক্রবর্তী
বৈদিক শ্লোকের মতন বয়ে যায় কাল । কালের দীর্ঘ যাত্রা পথে গড়ে ওঠা নগর, গ্রাম, শিল্প, নটনটীদের চলমান চিত্র কালের স্রোতে এক ছলাতে কোথায় মিলিয়ে যায় ।তারপর বর্তমানের বাকে এসে যুগযুগান্ত ধরে বহমান সভ্যতার নদী খাত শুকিয়ে জীবাস্মে পরিনত অতীত উঠে আসে ইতিহাসের পাতায় । আজ অতীতের এক নদী খাতে ক্ষনন কার্য চালিয়ে ইতিহাসের সেই বহমান অন্তশলীলার স্রোতকে কমন্ডুলুতে তুলে এনে নব জীবন দান করবো বলে ছুটে চলেছি কাল থেকে কালান্তরে ।
কিছু বছর আগে প্রকাশিত বিবিসির একটি রিপোর্ট পড়ে আশ্চর্য হয়েছিলাম । আশ্চর্য হওয়ারই কথা । রিপোর্টটিতে লেখা ছিলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রাজস্থানের থর মরুভূমির চিত্র ধরা পরেছে, যেখানে অন্তশলীলা হয়ে বয়ে চলেছে সরস্বতী নদী । ১৯৯০ সালে আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল হরিয়ানা অঞ্চলে ভারতের পবিত্র নদী সরস্বতী আবিষ্কার করা হয়েছে । সরস্বতী নদীকে নিয়ে ব্রিটিশ রাজত্বেও এক দীর্ঘ গবেষনা করা হয়েছিল । হিন্দু শাস্ত্র বেদে সরস্বতী নদীর বর্ননা করতে গিয়ে এর গতিপথের এক দীর্ঘ বর্ননা দেওয়া আছে । তাতে বলা হয়েছে ভারতবর্ষের উত্তরে অবস্থিত শিবালিক পর্বত থেকে হরিয়ানা, পাঞ্জাব পার করে এই নদী বর্তমানের রাজস্থানের থর মরুভূমিতে প্রবেশ করে বর্তমানের পাকিস্তানের সিন্ধু নদীতে মিলিত হয়েছে ।
ইংরেজ রাজত্বকালে রাজস্থানের ইতিহাস রচনার জন্য লেফট্যানেন্ট কর্নেল জেমস টডকে নিয়োগ করা হয়েছিল । টড দীর্ঘ সময় ধরে রাজস্থানের ইতিহাস সংস্কৃতি তথা সেখানকার সাধারন মানুষদের কথা তুলে এনে এগারো খন্ডের একটি রিপোর্ট জমা দেন । এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর ১৮৩৫ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে টডের মৃত্যু হয় । কারন এই দীর্ঘ যাত্রার ধকল তিনি নিতে পারেন নি । আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় সরস্বতী নদী তাই সেই আলোচনায় ফিরে আসি । টড তার রিপোর্টে লিখে গেছেন যে, মরুস্থলীতে তিনি বালির মধ্যে বেশ কিছু শুকনো নদী খাত দেখতে পেয়েছেন । যার ধারে প্রচীন ভারতীয় নগর সভ্যতার আভাস তিনি পেয়েছেন । একসময় সেখানে নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল । যার প্রমান স্বরুপ সেখানে আজও বাড়ি,ঘর, মানুষের ব্যাবহারের জিনিস পত্র , এমন কি মানুষ এবং পশুর কঙ্কালও তিনি দেখেছেন । স্থানীয় অধিবাসীদের গল্পকথা এবং লোক গানে তিনি ঘাগড় এবং হাকরা নদীর উল্লেখ পান যাকে স্থানীয় মানুষ প্রাচীন নদী সরস্বতী বলে মনে করেন । এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে ঘাগড় নদীই যে সরস্বতী নদী তার প্রমান কি । ব্রিটিশ রাজত্ব এই নিয়ে পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু গবেষনা হয় । এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত “Memoir of a map of Hindoostan “এ ঘাগড় নদীর একটি নক্সা তুলে ধরা হয় । ঘাগড় একটি মরসুমী নদী যা শিবালিক পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে চন্ডিগড়ের থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে পিঞ্জরে এসে সমতলে মিলিত হয়েছে । এরপর আম্বালা, শীর্শা এবং হনুমানগড় হয়ে রাজস্থানে প্রবেশ করেছে । ঘাগড় হাকরা নাম নিয়ে বর্তমান পাকিস্থানে প্রবেশ করে সিন্ধু নদীতে মিলিত হয়েছে । বর্তমান সময়েও ঘাগড় নদীকে বর্ষ ঋতুতে বইতে দেখা যায় । টডের রাজস্থানে বর্নিত ঘাগড় নদীর তীরে ধ্বংস প্রাপ্ত নগর সভ্যতা প্রমান দেয় যে কোন এক সময়ে এখানে নদী কেন্দ্রীক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ।
পাকিস্থানের সিন্ধ এবং বর্তমান হরিয়ানার ভাওয়ালপুরের মধ্যে এক দীর্ঘ নদী পথের উল্লেখ আমরা বিভিন্ন মধ্যযুগীয় গ্রন্থে পাই ।বহু মধ্য যুগীয় গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে সেই পথ দিল্লী থেকে ছিলো । সব থেকে অবাক করে ঋক বেদে সরস্বতীর যে গতিপথের বর্ননা দেওয়া আছে , সেই পথে গেলে বর্তমান রাজস্থানের থর মরুভূমিতে বেশ কিছু নদীখাত , নগর সভ্যতা এবং মিষ্টি জলের কূয়ো পাওয়া যায় । মরুভূমির মাঝে মিষ্টি জলের কুয়ো সত্যি আমাদের অবাক করে । শুধু তাই না । আরেকটা জিনিশ খুব অবাক করে, তা হচ্ছে নদীখাতের ধারে একশটি উট চালিত সেচে জল দেওয়ার চাকা , যা দিয়ে নদী থেকে জল সেচে দেওয়া হতো । ১০৩৭ সালে সুলতান মামুদ যখন ভারত আক্রমন করেন তখন এবং তার পরবর্তী সময় ১৩৯৮ সালে তৈমুর যখন সমরখন্দ থেকে আফগানিস্থান পার করে ভারতে প্রবেশ করেন তখন তারা ঘাগড় নদীর তীরে সরস্বতী নামে এক সমৃদ্ধ নগরের বর্ননা করেছিলেন । যে নগরীতে প্রায় ১০,০০০ মানুষের বসবাস ছিল, এবং তারা প্রত্যেকে শিক্ষা, সস্কৃতি এবং সম্পদে স্বয়ং সম্পূর্ন ছিলেন । এই সরস্বতী নগরী বর্তমানে হরিয়ানা রাজ্যের শীর্ষা ।
বিখ্যাত আরব পর্যোটক ইবন বতুতা তার ভ্রমন বৃত্তান্তে বলেছেন, পূর্ব রাজপুতানায় তিনি নদীর ধারে সমৃদ্ধ নগর দেখেছেন, তিনি দেখেছেন ঢেউ খেলানো শস্য ক্ষেত এবং আখের বাগান । বর্তমান সময়ে বসে এসব কল্পনা করতে সত্যি অবাক লাগে । আফগানিস্থান থেকে পাওয়া , পাস্তুন ভাষায় রচিত একটি কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ করে ব্রিটিশ গবেষকরা সরস্বতী নদীর উল্লেখ কচ্ছের রান অঞ্চলে পান । তাতে উল্লেখ আছে যে বর্তমানে যেখানে কচ্ছের রান , সেখানে প্রাচীনকালে সরস্বতী নদী থেকে শাখাপ্রশাখা বেরিয়ে বেশ কিছু শাখা নদী প্রবেষ করে বেশ কিছু ব দ্বীপ তৈরি করে এবং আরব থেকে বেশ কিছু মানুষ প্রাচীনকালে সেখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন ।
লেখা শেষ করার আগে একটি ছোট্ট তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই , তা হল, আমরা তো জানি যে সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । কিন্তু বর্তমানের বেশ কিছু আবিষ্কার এই চিত্র তুলে ধরছে যে সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ সিন্ধু নদের সাথে আরেকটি নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল, আর সেই নদী হচ্ছে সরস্বতী ।
আরো খবর »
-
প্রস্তুত হচ্ছেন অপু
-
সালমান শাহ'র স্ত্রী সামিরা ও ডনের যে ছবি ভাইরাল
-
সিরিয়ালে নারীদের অবস্থান হাস্যকর
-
বরের বয়স ৯ কনের ১৮, ব্যাপক তোলপাড়!
-
আমি মানসিকভাবে অসুস্থ, যা বলেছি সব মিথ্যা: রুবি
-
যে কারণে বিয়ের রাতে লাল শাড়ি পরতে বলা হয়
-
শাকিবের জন্য মধ্যরাতে অপুর পোলাও রান্না
-
'প্লিজ দেবের বিয়েটা দিয়ে দিন'
-
এবার আর গলবে না আপনার সাধের আইসক্রিম, জানেন কীভাবে?